ভূমিকা:-
১৯৫০ এর দশকের মধ্যপ্রাচ্যের মিশরে ক্ষমতা লাভ একদিকে মিশরকে যেমন আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল তেমনি নাসেরের কর্তৃক সুয়েজ খাল কোম্পানি জাতীয়করণের ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যের সুয়েজ সংকট সৃষ্টি করেছিল।
সুয়েজ সংকট সৃষ্টির কারণ:-
প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে দ্রুত করার জন্য ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরের মধ্যে সুয়েজ খাল তৈরির ব্যবস্থা করা হয়। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে সুয়েজ খাল খনন কার্য শুরু হয় এবং তুরস্কের সুলতান 20 বছরের জন্য এই খাল পরিচালনার দায়িত্ব সুয়েজ খাল কোম্পানির অংশীদার পরিচালনা ধীনের নাস্ত করেছিল। কিন্তু মিশরের নাসের বেশ কয়েকটি কারণে এই ব্যবস্থা মেনে নিতে চায়নি।
I. অর্থনৈতিক কারণ:-
সুয়েজ খাল মিশরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হলেও এই খাল থেকে আদায়কৃত অর্থের সামান্যই মিশর পেত।
আরও পড়ুন:-সার্ক কিভাবে গঠিত হয়েছিল? সার্কের উদ্দেশ্য কি ছিল
Ii. ব্রিটিশ সেনার অস্তিত্ব:-
সুয়েজ খালের নিরাপত্তার জন্য এই অঞ্চলে ব্রিটিশ সেনা নিযুক্ত ছিল। অর্থাৎ সুয়েজ খাল ও সন্নিহিত এলাকায় মিশরে কোন সন্নিহিত কর্তৃত্ব ছিল না।
Iii. আসোয়ান বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প:-
মিশরের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য নাসের নীলনদের ওপর আসোয়ান বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করেন। এই উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড, আমেরিকা ও বিশ্ব ব্যাংক প্রথমে অর্থ সাহায্য দিতে রাজি হলেও ১৯ জুলাই ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে এই অর্থ সাহায্যের প্রস্তাব বাতিল করলে নাসের এই ঘটনাকে মিশরের অপমান বলে ঘোষণা করেন।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া:—
I. ফ্রান্স ও ব্রিটেনের প্রচেষ্টা:-
নাসের সুয়েজ খাল সংক্রান্ত ঘোষণার ফলে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ ব্যর্থ হয়ে পড়ে। তাই ব্রিটেন ও ফ্রান্স উভয় মিশরে বিরুদ্ধে দ্রুত সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের পক্ষপাতী ছিল।
Ii. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা:-
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুয়েজ খাল ব্যবহারকারীদের নিয়ে এক সম্মেলনে প্রস্তাব দেন। ১৬ থেকে ২৩ শে আগস্ট ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে হওয়া এই সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব পেশ করেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া সহ পাঁচটি দেশ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে।
Iii. জাতিপুঞ্জ পরিসদের প্রচেষ্টা:-
১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ৫ অক্টোবর সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ নিরাপত্তা বৈঠকে ব্রিটেন ও ফ্রান্স সুয়েজ খালের আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু নাসের কোনমতেই আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাবে রাজি ছিলেন না এর ফলে মিশরের উপর একতরফা ভাবে মিশরের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যায়নি।
আরও পড়ুন:- ভারতের রেলপথ সম্প্রসারণের সম্পর্কে আলোচনা করো
সুয়েজ সংকটের ফলাফল:-
I. মিশর ও নাসেরের মর্যাদা বৃদ্ধি:-
সুয়েজ সংকটের দ্বারা সামরিক দিক থেকে নাসেরের লক্ষ্যপূরণ হয় এবং এর ফলে নাসেরের জাতিগত মর্যাদা ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। তিনি নিজেকে আরব জাতীয়তাবাদের “আধুনিক সালদিন” রূপে প্রতিষ্ঠা করেন।
ii. সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র গঠন:-
সুয়েজ সংকটকে কেন্দ্র করে মিশর সিরিয়ার ঐক্য অধিক সুদৃঢ হয়। মিশর ও সিরিয়া দুটি দেশ একত্রিত হয়ে সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র গঠন করে।
Iii. মধ্যপ্রাচ্যের ব্রিটেন ও ফ্রান্সের কর্তৃত্ব হ্রাস:-
সুয়েজ সংকটের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের ওপর ফ্রান্স ও ব্রিটেনের কর্তৃত্ব হ্রাস পেয়েছিল কারণ নাসেরকে উৎখাত করা বা সুয়েজ খালের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে তারা সফলতা পায়নি।
উপসংহার:-
সুয়েজ সংকট আধুনিক রাষ্ট্রনীতিকে প্রভাবিত করেছিল। তবে নাসেরের এক কর্তৃত্ব বলে সুয়েজ খাল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। তা ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মতো প্রথম বিশ্বের দেশ গুলিকেও আতঙ্কিত করে তোলে তবে এই সংকটের মাধ্যমে প্রতি পত্তি ও মর্যাদা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।