Or
ভারতের রেলপথ প্রবর্তন এর প্রভাব আলোচনা করো – রেলপথ স্থাপনের সুফল ও কুফল ?
ভূমিকা:-
প্রথম পর্যায়:-
১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ কাজে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উপর দায়িত্ব দেওয়া হয়। রেলপথ ব্যবস্থার এই প্রথম পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানগুলি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই জন্য সরকার “গ্যারান্টি প্রথা” প্রবর্তন করেন।
দ্বিতীয় পর্যায়:-
তবে ১৮৭০ এর দশকে ভারতের বেসরকারি মালিকানা ও সরকারি পরিচালনায় রেলপথের প্রসার ঘটতে থাকে। তবে সরকারি পরিচালনায় রেলপথ নির্মাণ ধীরগতি সম্পন্ন হওয়ায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অধিক গুরুত্ব আরোপিত হয়। এই পর্যায়ে পাঁচ শতাংশের পরিবর্তে ৩.৫০% সুদে গ্যারান্টি দেওয়া হয়।
রেলপথের ক্রমবিকাশ:-
১৮৫৮ থেকে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতে মোট ৩৭ হাজার মাইল রেলপথ বসানো হয়। তবে 1947 খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা লাভের সময় ভারতের রেলপথের দীর্ঘ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ হাজার মাইল।
রেলপথ প্রবর্তনের সুফল:-
i. যোগাযোগ সহজতর:-
রেলপথ প্রসারের ফলে ভারতে বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে যোগাযোগ সহযতর হয়ে ছিল এবং ভারত জোড়া রেলপথের চাল সর্বভারতীয় প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছিল।
ii . আধুনিক শিল্পায়নের প্রসার:-
এই প্রসারে সূত্র ধরে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সম্পদ সংগ্রহ এবং শিল্প বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তা নিয়োজিত করা সহজতর হয়ে উঠেছিল। রেলপথ প্রসারের ফলে পাট, কয়লা ,চা ,বস্ত্র চামড়া, ও চিনি প্রভৃতি ক্ষেত্রে যন্ত্রশিল্পের দ্রুত প্রসার ঘটেছিল।
iii. রপ্তানি বাণিজ্যের বৃদ্ধি:-
বাণিজ্যে শিল্পপ্রসার দুদিক থেকে রেলপথ সহায়ক হয়েছিল। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারত থেকে রপ্তানি বাণিজ্য প্রায় ২.৫ গুন বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে আমদানি বাণিজ্যের পরিমাণ ৩.৫০% বৃদ্ধি পায়।
iv. কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি:-
ভারতীয় রেলপথের দ্রুতপ্রসার কর্ম বিনিয়োগের দ্বারা উন্মুক্ত করেছিল। ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে রেলের নিযুক্ত কর্মচারীর সংখ্যা ছিল ৩৪ হাজার তা ১০ বছর পর বেড়ে গিয়ে ১৮৯৫ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় 27 লক্ষ 30 হাজার।
রেলপথ প্রবর্তনের কুফল:-
i. সম্পদের বহির্গমন:-
অনেক কংগ্রেস নেতা ভারতীয় সম্পদের বহির্গমন বা নিষ্কাশনের জন্য রেলপথকে অনেক অংশে দায়ী করেছেন।
ii. দুর্ভিক্ষের কারণ:-
রেলপথ উন্নয়নের জন্য বিপুল পরিমাণ ব্যয় হয় বলে দেশের খাদ্যদ্রব্যের ঘাটতি দেখা দেয়। উপরন্তু ভারত থেকে চাল গম ইত্যাদি খাদ্য শস্য প্রচুর রপ্তানি হলে ভারতে খাদ্যের সংকট বিপুল পরিমাণে দেখা দেয়।
iii. ইংরেজ নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি:-
রেলপথ ইংরেজদের ক্ষমতা কে আরো শক্তিশালী করে তোলে এর ফলে ভারতে যেকোনো প্রান্তে বিদ্রোহ দমনে তাদের সক্ষম করে তোলে।
মূল্যায়ন:-
পরিশেষে বলা যায় ভারতে রেলপথ স্থাপনে প্রাশ্চাত্য ব্রিটিশদের সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতার কাজ করলেও তারা পরোক্ষভাবে ভারতের আধুনিকতার এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। যা ভারতকে আধুনিকতার গোড়ায় আনতে সাহায্য করেছিল।