অথবা,
ভারতে মন্ত্রী মিশন পরিকল্পনা গুলির ওপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর।
Ans:-
ভূমিকা:—
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতে স্বাধীনতা সংক্রান্ত আলাপ আলোচনার জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্ট তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ভারতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। ভারত সচিব সারপেথিক লরেন্স, বাণিজ্য সচিব স্টাফর্ড ক্রির্পস এবং A.V আলেকজান্ডার ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী নিয়ে গঠিত উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এই কমিশন ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশন নামে পরিচিত।
পটভূমি:-
i. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতে একের পর এক গন আন্দোলন সর্বোপরি নৌ বিদ্রোহের ফলে ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে ওঠে।
ii. ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলি ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে নৌ বিদ্রোহের পর মন্ত্রী মিশনকে ভারতে পাঠানোর কথা ঘোষণা করেন।
মন্ত্রী মিশনের উদ্দেশ্য:—
ভারতে মন্ত্রী মিশনের আগমনের মূল উদ্দেশ্য গুলি ছিল প্রধানত দুটি—
i. ভারতকে স্বাধীনতা দান ও ভবিষ্যৎ সংবিধান রচনা করার জন্য গণপরিষদ গঠন ও তার নীতি পদ্ধতি স্থির করা।
ii. ভারতে সমস্ত রাজনৈতিক দল গুলি মতানেক্তের ভিত্তিতে ও অন্তর্বর্তীকালীন জনপ্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে একটি সরকার গঠন করা।
মন্ত্রী মিশনের প্রস্তাব:—
১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ২৪ মার্চ মন্ত্রী মিশন ভারতে পৌঁছায়। এই মন্ত্রী মিশন গান্ধীজী সহ ভারতের বিভিন্ন ব্যক্তির ও দলের সঙ্গে 182 টি বৈঠক এবং ৪৭২ জন নেত্রী স্থানীয় ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব পেশ করে।এই প্রস্রাবগুলি হলো —
i. ব্রিটিশ শাসিত ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলি নিয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠন করা হবে।
ii. প্রদেশ গুলি পূর্ণ স্বায়ত্ত শাসন থাকবে। কেন্দ্রের হাতে কেবলমাত্র পররাষ্ট্র প্রতিরক্ষা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকবে।
iii. হিন্দু প্রধান দেশ গুলি ‘ক‘ শ্রেণীতে এবং মুসলিম প্রধান দেশ গুলি ‘ খ‘ শ্রেণীতে বিভক্ত করা হবে এবং বাংলা ও আসাম কে ‘গ’ শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়।
iv. ভারতে যোগদান করতে ইচ্ছুক দেশীয় রাজ্য ও প্রদেশ গুলি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে সংবিধান সভা গঠিত হবে। এই গন পরিশোধ স্বাধীন ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান রচনা করবে।
v. সংবিধান রচনা না হওয়া পর্যন্ত ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নিয়ে একটি অন্তবর্তী কালীন সরকার গঠিত হবে।
গুরুত্ব:—
ভারতের মুক্তির সংগ্রামের ইতিহাসের মন্ত্রী মিশনের প্রস্রাবগুলি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর দ্বারা বেশ কয়েকটি কার্য সম্পন্ন হয়েছিল যেমন —
A. ভারতের ঐক্য:—
ভারতকে ভাগ না করে ব্রিটিশ সরকারের স্বাধীনতা দেওয়া এটি ছিল শেষ প্রচেষ্টা।
B. দেশীয় রাজ্যের জনগণের অধিকার:—
এই প্রধান দেশীয় রাজ্যের জনগণ প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার লাভ করে।
C. তিনটি গরিষ্ঠ স্বীকৃতি:—
কেবিনেট মিশন ও হিন্দু-মুসলিম ও শিক সম্প্রদায় ছাড়া অন্য সম্প্রদায়কে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ফলে প্রতিনিধী নির্বাচন করার সময় বিশেষ রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়নি।
D. অ-ভারতীয় সদস্যদের অনুপস্থিতি:—
ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাবিত আইন সভাতে কোন অভারতীয় সদস্য গ্রহণের কথা বলা হয়নি ফলে জটিল অবস্থা সৃষ্টি হয়নি।
E. গণপরিষদের ক্ষমতা:—
একমাত্র মন্ত্রী মিশনের প্রস্তাবে পরবর্তীকালে সংবিধান রচনার জন্য গণপরিষদের হাতে প্রচুর ক্ষমতা দেওয়া হয়।
উপসংহার:—
ভারতবর্ষে গণঅভুত্থান সম্প্রদায়িক দাঙ্গা ইত্যাদি পরিপ্রেক্ষিতে উদু বিঘ্ন হয়ে ব্রিটিশ সরকার মন্ত্রী মিশন কে ভারতে পাঠায়। কিন্তু তবুও এই মিশন টি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সুগম করে তুলেছিল তাই বলা যায় না ভবিষ্যৎ ভারতের আইন ও শাসন সংক্রান্ত ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনে ও সংবিধান রচনায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালিত হয়েছিল।
F.A.Qs
মন্ত্রী মিশন কী ?
Ans:- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতে স্বাধীনতা সংক্রান্ত আলাপ আলোচনার জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্ট তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ভারতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন মন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত কমিশন ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশন ।
মন্ত্রী মিশন পরিকল্পনা সদস্য সংখ্যা কতজন ?
Ans:- মন্ত্রী মিশন পরিকল্পনা সদস্য সংখ্যা ছিল ” তিন জন “।
মন্ত্রী মিশন ভারতে আসে কত খ্রিস্টাব্দে ?
Ans:- ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে মন্ত্রী মিশন ভারতে আসে।
ক্যাবিনেট মিশন কবে কেন ভারতে আসে ?
Ans:- ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয়দের হাতে শাসন ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য এবং ভারতীয় নেতৃবর্গের সঙ্গে আলাপ-আলােচনার জন্যে।