আধুনিক রাষ্ট্রের আইন প্রণয়নের কার্যাবলী আলোচনা কর।

 Ans:- 

আইন বিভাগ:- 

        আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হলো আইন বিভাগ। চরম রাজতন্ত্র এবং একনায়কতন্ত্র আইন বিভাগের প্রধান্য থাকলে ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় এই বিভাগে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রয়েছে। অধ্যাপক অ্যালান বল তার ” modern policies and government” গ্রন্থে বলেছেন ” …… Historically assembly have emergen from the executives need for advisory bodies” .

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

আইন বিভাগের কার্যাবলী:- 

         সাধারণভাবে আধুনিক রাষ্ট্রের আইনসভার কার্যাবলী গুলি হল—

     i. আইন সংক্রান্ত কাজ:- 

আইন সভায় সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল আইন প্রণয়ন করা। আইনসভার জনমতের গতি প্রকৃতি সতর্ক দৃষ্টি রেখে নতুন আইন প্রণয় ন ও পুরাতন আইন সংশোধন করে এবং নতুন অপ্রয়োজনীয় বাতিল করে দেয়।

    ii. শাসন সংক্রান্ত কার্যাবলী:-

 আইনসভার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ করা। মন্ত্রিপরিষদ পরিচালিত শাসন ব্যবস্থায় মন্ত্রীরা তাদের কার্যাবলীর জন্য আইন সভার কাছে দায়িত্বশীল থাকেন। আইনসভা আস্থা হারালে তাদের পথ ত্যাগ করতে হয়। এলান বল তাই আইন বিভাগকে বলেছেন” break on the government motor”.

    iii. বিচার সংক্রান্ত কাজ:-

 আইনসভা অনেক সময় বিচার বিভাগীয় কার্য সম্পাদন করে থাকে। কোন উচ্চপদস্ত সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে যদি কোন গুরুত্বতর অভিযোগ আনা হয় তবে তার বিচার আইনসভা করে।

    iv. অর্থ সংক্রান্ত কাজ:-

             গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনসভার সম্মতি নিয়ে প্রতি আর্থিক বছরের শুরুতে সরকারের জাতীয় আয় ব্যয় বা বাজেট পেশ করা হয়। আইনসভার অনুমোদন ছাড়া কোন কর ধার্য, কর সংগ্রহ বা অর্থ ব্যয় করা যায় না। আবার অর্থ ঠিকমত খরচ হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন সভায় বিভিন্ন কমিটি গঠিত হয়। যেমন ” Public account” কমিটি।

     v. সংবিধান রচনা ও সংশোধন সংক্রান্ত কাজ:-

         কোন কোন দেশের আইন সভা সংবিধান রচনা ও সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা ভোগ করে থাকে। যেমন ভারতীয় সংবিধানে ৩৬৮ নং ধারা অনুসারে আইনসভা সংবিধান সংশোধনের মূল ক্ষমতা ভোগ করে। আবার কোন কোন রাষ্ট্রে আইনসভা সংবিধানের চূড়ান্ত ব্যাখ্যা কর্তা হিসেবে কাজ করে। যেমন সুইজারল্যান্ডের আইনসভা।

      vi. রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি:- 

                 আইন সভায় যেকোনো আইন প্রণীত হওয়ার সময় আইনের খসড়া প্রস্তাবের উপর বিতর্ক অনুষ্ঠান হয়। আর এই বিতর্ক সংবাদপত্র, বেতার দূরদর্শন প্রভৃতির মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ায় জনগণের রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি পায়।

       vii. নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ:-

                      আইনসভা কিছু কিছু নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ করে থাকে। যেমন রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভারতের আইনসভা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বা উপরাষ্ট্রপতি নিকৃষ্ট সংখ্যক ভোট না পেলে আইনসভা তাদের নির্বাচন করে।

 

বিচারপতিদের পদচ্যুত করার ক্ষমতা:- 

          কোন কোন দেশে বিচারপতিদের অপসারণ করার ক্ষমতা আইনসভার হাতে ন্যস্ত থাকে। যেমন ভারতের আইনসভা উভয় কক্ষে মোট সদস্য সংখ্যায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং ভোট দানকারী সদস্যদের ২/৩ অংশের সমর্থনের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের অপসারণ করতে পারে।

মূল্যায়ন:- 

          পরিশেষে বলা যায় লর্ড ডাইসি উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে আইনসভার সার্বভৌমত্ব তত্ত্ব বিশ্লেষণ করে বলেছিলেন”যেকোনো দেশের আইনসভা সব বিষয়ে শেষ কথা বলার অধিকারী, কিন্তু এই ক্ষমতা ও কার্যাবলী প্রকৃতি ও পরিধি সব দেশে ও সর্ব কালে অভিন্ন” । সত্বেও একথা ঠিক যে রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রকৃতি পরিপ্রেক্ষিতে আইনসভার ক্ষমতা ও প্রভাব নির্ধারিত হয়।

Rate this post

Leave a Comment