মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ গুলি আলোচনা করো ? পরিবেশের উপর মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রভাব গুলি আলোচনা করো ? মৃত্তিকার কলয়েড কী?

Ans:-

 মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ:-

 প্রাকৃতিকভাবে এবং মূলত মানুষের কাজকর্ম ও হস্তক্ষেপের ফলে যখন মাটি শীর্ষস্থ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং মাটি তার ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম ও হারিয়ে ফেলে তখন তাকে মৃত্তিকা ক্ষয় বলা হয় মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণগুলি দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা হয় যথা ——

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রাকৃতিক কারণ:-

       মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই মূলত প্রাকৃতিক উপায়ে বা প্রাকৃতিক কাজকর্মের ফলে এ ভূপৃষ্ঠের যখন শীর্ষস্থল ক্ষয় প্রাপ্ত হয় তখন তাকে ভূতাতিক ক্ষয়। হয় বলা হয় এবং প্রাকৃতিক কারণ গুলি হল——-

 ১. জলবায়ু গত কারণ:-

মৃত্তিকা ক্ষয়ের সবচেয়ে বেশি কার্যকরী উপাদান গুলি হল বৃষ্টির ফোঁটা ও জলপ্রবাহ জনিত হয় যাদের একসাথে জলগঠিত হয়েও বলা হয়।

   i. বৃষ্টির ফোঁটার প্রভাবে ক্ষয়:-

সব বেগে নামতে থাকা বিভিন্ন আকৃতির বৃষ্টির ফোটা গুলি যখন মাটিতে উপরে তখন মাটির কনাগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে সেগুলি উলঙ্গ আনুভূমিকভাবে ছিটকে যায় বাতাসে ওই আলগা কনা গুলি অনেক দূরে ছড়িয়ে পড়ে ও মৃত্তিকার ক্ষয় হয়।

    ii. জলপ্রবাহ জনিত ক্ষয়:-

বৃষ্টির ফোটার আঘাতে সৃষ্টি মাটির ছিটকানো তরল ভূমিধার অনুসারে অন্যত্রে অপসারিত হয় যাকে জলপ্রবাহ জনিত ক্ষয় বলে। জলপ্রবাহ জনিত ক্ষয় নিম্নলিখিত তিন প্রকার হয়—-

         ক. চাদর ক্ষয়:-

যখন বৃষ্টির জল ভূপৃষ্ঠের ওপরে একটি পাতলা স্তর রূপে প্রবাহিত হয় তখন তাকে চাদর ক্ষয় বলে। এবং এই প্রবাহের মাধ্যমে বৃষ্টির ফোটার আঘাতে মাটি যখন উপরেপৃষ্ঠ থেকে অপসারিত হয় তখন তাকে চাদর ক্ষয় বলে।

          খ. নানি ক্ষয়:-

চাঁদের খয়ের মাধ্যমে সরো সরো যে হাতের সৃষ্টি হয় তাকে নালি ক্ষয় হয় বলে। এবং বৃষ্টির জল একত্রিত হয়ে নালীর মাধ্যমে প্রবাহিত হলে হয় করার ক্ষমতা আরও বেড়ে যায় ফলে নালী গুলি আরো বড় ও দীর্ঘায়িত হতে থাকে তাই এই ধরনের ক্ষয়কে নালি ক্ষয় বা Rill Erosim বলে।

            গ.খাত ক্ষয়:-

নালিগুলি যখন তীব্র ক্ষয় ও পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে খাতে পরিণত হয় তখন তাকে খাত ক্ষয় বলে।

   ২.বায়ু প্রবাহ জনিত ক্ষয়:-

এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি মৃত্তিকা ক্ষয় হয় হয় শুষ্ক ও শুষ্ক প্রায় অঞ্চলে অপেক্ষা কৃত শুকনো মাটির পৃষ্ঠ তলে ওপর দিয়ে প্রবল বেগে যখন বাতাস প্রবাহিত হওয়ার সময় শুষ্ক করা সমূহকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে উড়িয়ে নিয়ে যায়।

   ৩. ভূ প্রাকৃতিক কারণ:-

মৃত্তিকা ক্ষয়ের ভূপ্রাকৃতিক কারণের মূল উপাদানগুলি হল ভূমির ঢালের প্রকৃতি, ঢালে দৈর্ঘ্য, ঢালের অংশ ,স্থানীয় উচ্চতা প্রভৃতি।

মৃত্তিকা ক্ষয়ের মানুষ্য সৃষ্ট কারণ:-

মৃত্তিকা ক্ষয়ের মানুষ্য সৃষ্টি কারণগুলি হল——

   i. বনভূমির ধ্বংস সাধন:-

অতিরিক্ত হারে বনভূমি ধ্বংসের ফলে বৃষ্টির ফোঁটা সরাসরি মাটির করাকে আঘাত করে মাটির কিছু ভৌত ধর্মেরও পরিবর্তন ঘটে এবং মানুষের দ্বারা ভূমির ব্যবহারের জন্য এরূপ পরিবর্তনের জন্য দ্রুত মৃত্তিকা ক্ষয় হয়।

    ii. অনিয়ন্ত্রিত পশুপালন:-

খাদ্যের জন্য গোচারণ ভূমিতে অতিরিক্ত মাত্রায় পশু পালন করার ফলে গবাদি পশু ঘাসের আবরণ কে খেয়ে ফেলে এতে মাটিকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রাখতে   পারেনা। এছাড়া পশুর পায়ের আঘাতে মাটির পৃষ্ট স্তর আলগা হয়ে যায়।

    iii. নির্মাণ কাজ:-

বিভিন্ন নির্মাণ কার্যের সময় যন্ত্রের আঘাতে মাটিতে কিংটন ফাটলের তৈরি হয় ও মাটি অত্যাধিক পরিমাণে আলগা হয়ে যাওয়ায় এই সময় খুব সহজে মৃত্তিকা ক্ষয় হয়।

পরিবেশের ওপর মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রভাব:-

পরিবেশের ওপর মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রভাব গুলিকে দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে যথা—-

 ক. প্রত্যক্ষ ফল:-

      i. উর্বর মাটির অপসারণ:-

মাটির উপরের স্তর থেকে বিভিন্ন জৈব ও খনিজ পদার্থ অপসারিত হওয়ায় মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায়।

      ii. উর্বরতা হ্রাস:-

উর্বর কৃষি জমি থেকে জৈব ও খনিজ পদার্থ অপ্রসারিত হলে সেই জমির উর্বরতা বেশ কমে যায় বা উৎপাদনের হার খুব কম হয়।

    iii. গাছে পুষ্টি মৌলের অপসারণ:-

মৃত্তিকা ক্ষয়ের সাথে গাছের তরকারি প্রধান পুষ্টি মৌল N২, P, Ca ইত্যাদি এবং অনুখাদ্য গুলি হল লোহা, দস্তা , বোরণ ইত্যাদি অপসারিত হয়ে জমির উর্বরতার ক্ষতি করে।

  খ. পরোক্ষ ফল:-

        i. বন্যার সৃষ্টি:

ক্ষয়জাত পদার্থ গুলি নদী খাতে জমলে খাতের উচ্চতা বেড়ে যায় এবং জল বহন ক্ষমতা কমে যায় ফলে বর্ষাকালে নদীর দুই তীরে জল ছাপিয়ে বন্যার সৃষ্টি করে।

    ii. জলের ঘনত্ব ও স্বচ্ছতার উপর প্রভাব:-

ক্ষয়জাত দ্রব্যগুলি নদীর জলে মেশায় নদীর জলের ঘনত্ব বাড়ে এবং জল ঘোলা ও অস্বচ্ছ হয়ে যায়। ফলে জলবিদ্যুৎ তৈরির কাজে এই জল লাগে না।
iii. দূষণ:-
ক্ষয়জাত অতি সূক্ষ্ম কণাগুলি বায়ুতে মিশে ভাসমান কণার সংখ্যা বাড়ানোর ভূপৃষ্ঠের সৌর কিরণ এর প্রবেশ পথে বাধা সৃষ্টি করে। এছাড়া বায়ুর ঘনত্ব বাড়িয়ে বায়ু দূষণের সৃষ্টি করে।

মৃত্তিকার কলয়েড:-

        মৃত্তিকায় অবস্থিত অতি সূক্ষ্ম খনিজ ও জৈব কণার সমূহকে মৃত্তিকার কলয়েড বলে।

Rate this post

Leave a Comment