স্বাধীন বাংলাদেশের উত্থানে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা আলোচনা কর।

ভূমিকা:-

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দক্ষিণ এশিয়ার উপনিবেশিকতা ঘটলে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। তবে সৃষ্টির কিছু কাল পরে পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের উপর অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সামাজিক ও সংস্কৃতি বঞ্চনা চাপিয়ে দিলে মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটে। তবে প্রেক্ষাপট হিসেবে বিভিন্ন কারণ আলোচনা করা যায়। যেমন —

  I. ভৌগোলিক ব্যবধান:-

পাকিস্তানের দুই অংশ পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে এক হাজারের বেশি মাইলের ব্যবধান থাকলেও এবং উভয় স্থানের অধিকাংশ মানুষই মুসলিম সম্প্রদায়ের হলেও তাদের মধ্যে যথেষ্ট ভাষাগত পার্থক্য ছিল।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

  Ii. অর্থনৈতিক শোষণ:-

পাকিস্তান সৃষ্টির তিন থেকে চার বছর পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালীদের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের তীব্র অর্থনৈতিক বৈষম্য চাপিয়ে দেওয়া হয়। শিল্পায়ন না ঘটিয়ে সরকার পূর্ব পাকিস্তানকে শুধুমাত্র কৃষি উৎপাদক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলে। ফলে পশ্চিম পাকিস্তান এর বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালীদের মনে ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হয়।

   Iii. সামরিক অসাম্য:-

পাক সেনা বাহিনীতে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা অবহেলিত ছিল মাত্র 5% বাঙালি পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী ছিল কারণ পাক সরকার বাঙ্গালীদের ভীতু বলে মনে করতো ফলে বাঙালিরা খুব্ধ হয়ে যায়।

আরও পড়ুন:-ভারতের রেলপথ সম্প্রসারণের সম্পর্কে আলোচনা করো

    Iv. ভাষা সমস্যা:- 

পাকিস্তানের কেন্দ্র সরকার উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা রূপে ঘোষণা করলে পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষীর মানুষ ক্ষুব্ধ হয়। কারণ তারা চাইছিল বাংলা ভাষাকে জাতীয় ভাষাতে পরিণত করতে ফলে ১৯৪৮ থেকে ৫২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে গড়ে ওঠে বাংলা ভাষার আন্দোলন।

    V. মিথকা মামলা:-

পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক স্বায়ত্ত শাসনের দাবিতে আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবর রহমান আন্দোলন শুরু করলে মুজিবর রহমান সহ 35 জন নেতা কে গ্রেফতার করে সরকার তাদের মিথ্যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। ফলে বাংলাদেশে মুক্তি যুদ্ধ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। প্রবল আন্দোলনের চাপে সরকার শেষ পর্যন্ত এই মামলা তুলে নিতে বাধ্য হয়।

আরও পড়ুন:- ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি আলোচনা কর।

   Vi. ১৯৭০ এর নির্বাচন:-

ইয়া হিয়া খানের গণতন্ত্র রক্ষার প্রতিশ্রুতির মত ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে ডিসেম্বর মাসে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২টি আসনের মধ্যে মুজিবরের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের ১৬০ টি আসন লাভ করে। অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের 140 টি আসনের মধ্যে জুলফিকার আলী ভুক্ত পিপলস পার্টি 81টি আসল লাভ করে। এইভাবে জাতীয় পরিষদের সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাওয়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নতুন সংবিধান রচনা সম্ভাবনা দেখা দেয়। তবে পাক রাষ্ট্রপতি ইয়া হিয়া খান জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত করলে পূর্ব পাকিস্তান অগ্নি গর্ত হয়ে ওঠে।

    Vii. ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ:-

১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতার দাবিতে পূর্ব বাংলায় গণআন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে এবং ২৬ মার্চ মুজিবুর বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। মুক্তিবাহিনী পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। পূর্ববঙ্গের মৌলবাদী আলবদর আল সমাস প্রভৃতি দলগুলি পাক বাহিনীকে সহায়তা করলে ও ২৬৭ দিন ধরে হত্যা লীলা চললে ১০ থেকে ৩০ লক্ষ মানুষ মারা যায় এবং অন্তত ৪ লক্ষ বাঙালি নারীর ধর্ষিতা হয়।

    Viii. স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম:-

২৫ মার্চ মধ্যরাতে মুজিবুর রহমান কে গ্রেফতার করা হলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এই ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন শেষ পর্যন্ত পাক সেনা প্রধান A .k নিয়াজী ৯৩ হাজার সৈন্যসহ ভারতীয় সেনাপ্রধান জগজিৎ  সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করলে মুক্তিযুদ্ধের অবসান ঘটে। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিযুক্ত হন।

উপসংহার:-

পাক বাহিনীর সাধ্য করলেও শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত এই মুক্তিযুদ্ধে বাঙ্গালীদের তীব্র আত্মনিয়োগের ফলে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়। ক্রমেই ভারত ও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মিত্রতা আরো দৃঢ় হয়। এই দুই বাংলার বাঙালি জাতিকেই এক নতুন সংস্কৃতির দিশার সন্ধান দেয়।

5/5 - (1 vote)

Leave a Comment

x