Or
নয়া উপনিবেশবাদ বা নয়া সাম্রাজ্যবাদ বলতে কী বোঝায় উপনিবেশবাদ বিষয়ে হবসন ও লেনিন তত্ত্ব ব্যাখ্যা কর ?
Answer:-
ভূমিকা:-
ষোড়শ শতক থেকে উনিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত এশিয়া ,আমেরিকা ও আফ্রিকা মহাদেশে যে ঔপনিবেশবাদের সূচনা হয়েছিল তারে একটি বিশেষ দিক ছিল সাম্রাজ্যবাদ। সাম্রাজ্যবাদ বলতে ক্ষমতাশীল একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে এক বা একাধিক রাষ্ট্রের একটি বিশেষ সম্পর্ককে বোঝানো হয়। যা নিজের স্বার্থে উপনিবেশের অর্থনীতিকে ভেঙে দিয়ে নতুন করে বিনষ্ট করে অধিকতর অর্থনীতি শোষণ করাই হলো সাম্রাজ্যবাদ।
সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে হবসনের তত্ত্ব:-
সাম্রাজ্য অর্থনৈতিক ব্যাখ্যাকারদের মতে উল্লেখযোগ্য ছিলেন কাল মার্কস। তিনি সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভাবনকে বিশ্ববাসীর কাছে অতুলনীয়ভাবে তুলে ধরেছিলেন। পরবর্তীকালে তার অনুগামী ব্রিটিশ রাজনৈতিক দার্শনিক যে .এ হবসন ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত “Imperialism a study” নামক গ্রন্থে দেখিয়েছেন।
i. শিল্পাশ্রয়ী অর্থনীতির প্রতিফলন:-
হবসন এর মতে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় স্ববিরোধ ছিল। কারণ উৎপাদন ব্যবস্থায় মুনাফা ও ক্রয় মূল্যের মধ্যে পার্থক্য বৃদ্ধি পেলে উদ্বৃত্ত উৎপাদন সম্ভব হয় না।
ii. ফিন্যান্স মূলধন:-
তার মতে, সাম্রাজ্যবাদ হলো মূলত ফিনান্স মূলধনের দ্বারা পরিচালিত এক ধরনের অর্থনীতি ব্যবস্থা, যার দ্বারা সমাজের সার্বিক অংশ নয় একমাত্র ফিনান্স মূলধন এর ক্ষেত্রে মুষ্টিমেয় উচ্চ বর্গ লাভবান।
iii. অলাভ জনক ব্যবস্থা:-
এই ধরনের সাম্রাজ্যবাদের সামরিক বাহিনী ও প্রশাসনিক খাতে খরচের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে তা লাভজনক নয়।
iv. জাতীয় স্বার্থে পরিপন্থী:-
সাম্রাজ্যবাদ সমাজের নিচু তলার মানুষ বা শ্রমিক শ্রেণীর জন্য দীর্ঘ মেয়াদী সুফল দানের কোন ব্যবস্থা ছিল না। উপরন্ত সাম্রাজ্যবাদের দ্বারা বহির্ দেশে কাজ ও বৃত্তির সুযোগ সৃষ্টি করে অভ্যন্তরীণ বিভাজনের প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছিল। তাই হবসনের মতে সাম্রাজ্য বা ছিল জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী।
সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে লেনিনের তত্ত্ব:-
বিখ্যাত রুশ কমিউনিস্ট নেতা V.I লেনিন ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত গ্রন্থ ” Imperialism the highes stage of Capitalism”গ্রন্থের সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ এর বিষয়ে নানা তথ্য ব্যাখ্যা করেছেন। যেমন——
i. ফিন্যান্স মূলধন:-
লেনিনের মতে সাম্রাজ্যবাদ ছিল ফিন্যান্স মূলধনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এক ধরনের ব্যবস্থা। ফিন্যান্স মূলধন ছিল বনিক ও শিল্প মূলধনের সমষ্টিগত রূপ।
ii. বিদেশে অর্থ বিনিয়োগ:-
সাম্রাজ্যবাদ এর দ্বারা পুজি প্রাচুর্য হেতু স্বদেশের বিনিয়োগের পরেও উদ্বৃত্ত পুঁজি বিদেশে বিনিয়োগের অনুসন্ধান শুরু হয়। ফলে শিল্প উৎপাদিত বর্ণ অপেক্ষা পুঁজি রপ্তানির মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব স্থাপনের চেষ্টা হয়েছিল।
iii. উপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা:-
উনিশ শতকের শেষে ও বিংশ শতকের প্রথমার্ধে ফিনান্স মূলধন সংক্রান্ত দেশগুলিতে নতুন বুর্জোয়া ও অভিজাত তন্ত্র গড়ে উঠেছিল।
উপসংহার:-
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায় যে অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে হবসন ও লেনিনের ব্যাখ্যা এক নতুন মাত্রা আনে। সাম্রাজ্যবাদের ইতিহাস চর্চায় এক নতুন অঙ্গীকারের সূচনা হয়। ফলে সাম্রাজ্যবাদের চিন্তা জাতির পক্ষে এক নতুন ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসে।