রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা আলোচনা করো

 জরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা:-

     ভারতে এমন কোন জরুরী পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তার মোকাবিলা করার জন্য সংবিধান অনুসারে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে বিশেষ কিছু ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে,  তাকে রাষ্ট্রপতির জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা বলে। সংবিধানের ৩৫২-৩৬০ নং ধারা অনুসারে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে নিম্নলিখিত তিন ধরনের জরির অবস্থার সংক্রান্ত ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।

  i. জাতীয় জরুরি অবস্থা:-

রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন সমগ্র ভারত বা ভারতের কোন অংশে যুদ্ধ, বহির আক্রমণ, সশস্ত্র বিদ্রোহ জনিত কারণে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে বা সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তিনি ৩৫২ নং ধারা অনুসারে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

     অনুমোদন:-

এই অবস্থা ঘোষণার এক মাসের মধ্যে তা সংসদে উভয়  কক্ষ দ্বারা অনুমোদিত না হলে বাতিল হয়ে যায়। এই অবস্থা অনুমোদনের জন্য প্রয়োজন পার্লামেন্টের প্রতিটি কক্ষের মোট সদস্যের সংখ্যা গরিষ্ঠের সমর্থন এবং উপস্থিতি ও ভোট দানকারী ২/৩ শতাংশ প্রয়োজন।

     বলবধকাল:-

এই ঘোষণা অনুমোদনের পর তা 6 মাস পর্যন্ত বল বোধ থাকে। এবং পার্লামেন্টের অনুমোদন নিয়ে তা আরো ছয় মাস পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে তবে সর্বাধিক কতদিন পর্যন্ত এই অবস্থার কার্যকাল রাখা যায় সেই বিষয়ে সংবিধানে কিছু বলা নেই।

ফলাফল:-

     অ্যাড্রিনেন্স ঘোষণা:-

রাজ্য তালিকাভুক্ত যেকোনো বিষয়ে সংসদ আইন প্রণয়ন করার জন্য রাষ্ট্রপতি অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারে।

     লোকসভা ও রাজ্য আইনসভার কার্যকাল বৃদ্ধি:-

এই সময় লোকসভা ও রাজ্য আইনসভার কার্যকালের মেয়াদ এক বছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।

     মৌলিক অধিকার পূর্ণ:-

এই অবস্থা চলাকালীন 19 নং ধারায় বর্ণিত মৌলিক অধিকার গুলি খন্ড হয়ে যায়।

ii. শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা:-

রাষ্ট্রপতি যদি রাজ্যপাল বা অন্য কোন সূত্র মারফত জানাতে পারে কোন রাজ্যে সংবিধান মেনে শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে না তবে তিনি ৩৫৬ নং ধারা অনুসারে শাসনতান্ত্রিক অচল অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা বা রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে পারে।

      অনুমোদন:-

রাষ্ট্রপতি এই ঘোষণা দুই মাসের মধ্যে সংসদের উভয় কক্ষে আলাদা ভাবে অনুমোদিত না হলে তা বাতিল হয়ে যায়।

      বলবধকাল:-

ঘোষণা অনুমোদনের পর এই অবস্থা ছয় মাস পর্যন্ত কার্যকাল থাকে। এবং পার্লামেন্টের অনুমোদন নিয়ে মেয়াদ আরো ছয় মাস বাড়ানো যেতে পারে।

ফলাফল:-

    আইন প্রণয়ন:-

ওই রাজ্যের জন্য সংসদ আইন প্রণয়ন করতে পারে।

     বাজেট ও অর্থবিল পাস:-

এই অবস্থায় সংসদ ওই রাজ্যের জন্য বাজেট ও অর্থবিল পাস করতে পারে।

     রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপের নিষেধাজ্ঞা:-

এই অবস্থায় সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র ও হাইকোর্টের কাজ কর্মের ওপর রাষ্ট্রপতি কোন রকম হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

iii. আর্থিক জরুরি অবস্থা:-

রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন সমগ্র ভারত বা ভারতের কোন অংশে আর্থিক সুনাম খন্ন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তবে তিনি ৩৬০ নং ধারা অনুসারে সমগ্র ভারত বা ভারতের সেই অংশে আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।

      অনুমোদন:-

এই ঘোষণা দুই মাসের মধ্যে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষ দ্বারা অনুমোদিত না হলে তা বাতিল হয়ে যায়।

ফলাফল:-

      আর্থিক বিষয়ে নির্দেশ দান:-

এই অবস্থায় রাজ্যগুলিকে কেন্দ্র আর্থিক বিষয়ে পরামর্শ দান করে।

       বেতন ও ভাতা রাস:-

এই সময় সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও ভাতা প্রমাণই নির্দেশ দিতে পারেন রাষ্ট্রপতি।

মূল্যায়ন:-

ভারতের ঐক্য ও জাতীয় সংহতি এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী যাতে মাথা ছাড়া দিতে না পারে তার জন্যে রাষ্ট্রপতিকে এই বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হলেও তা বিচ্ছিন্নভাবে সমালোচিত রয়েছে। জরুরি অবস্থার সময় রাজ্যগুলির ওপর কেন্দ্রের কর্তৃত্ব বৃদ্ধি পাওয়া একে যুক্তি ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো বিরোধী বলা হয়। আবার জরুরি অবস্থা চলাকালীন মৌলিক অধিকার খন্ড হয় এবং আমলাদের কর্তৃত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই এই ক্ষমতাকে গণতন্ত্র বিরোধী বলেছেন।

4.5/5 - (4 votes)

Leave a Comment