অথবা
বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা কিভাবে রক্ষা করা যায় ?
অথবা
বিচার বিভাগের স্বাধীনতার শর্তগুলি বিশ্লেষণ কর ?
Ans:-
বিচার বিভাগীয় সমীক্ষা:-
বিচার বিভাগীয় সমীক্ষা বলতে বোঝায় সংবিধানের পরিপ্রেক্ষিতে কোন আইন ন্যায় সঙ্গত কিনা তা নিয়ে বিচার করা। আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগ যদি সংবিধান বিরোধী কোনো আইন প্রণয়ন করে বা আদেশ জারি করে তবে সেই আইন বা আদেশকে বিচার বিভাগ বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ী এবং অবৈধ বলে ঘোষণা করতে পারে বিচার বিভাগের এই ক্ষমতা কে ” power of judicial review” অথবা বিচার বিভাগীয় সমীক্ষা বলা হয়।
বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা রক্ষা:-
স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ব্যক্তির অধিকার ও স্বাধীনতাকে মর্যাদা দিতে পারে আর গণতন্ত্রকে মজবুত ও শক্তিশালী করতে পারে তাই বিচার ব্যবস্থাকে নিরপেক্ষ নির্ভীক ও দুর্নীতিযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য ভারতীয় সংবিধানে বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
i. বিচারপতিদের যোগ্যতা:-
আইন অনুযায়ী কোন বিচার কার্য সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে হলে উপযুক্ত গুণ সম্পূর্ণ আইন ও সংবিধানের সম্পর্কে অভিজ্ঞতা, সৎ, নির্ভীক, নিরপেক্ষ ও রাজনীতিক ব্যাক্তিদের সঙ্গে সম্পর্কহীন ব্যক্তিদের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করতে হবে।
ii. নিয়োগ পদ্ধতি:-
বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা সংরক্ষণের জন্য বিচারকদের নিয়োগ পদ্ধতি নিরপেক্ষ হওয়া উচিত। পৃথিবীর বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশে তিনটি পদ্ধতিতে বিচারপতি নিয়োগ করা হয় যথা—
A. জনগণের দ্বারা:-
এই পদ্ধতি গণতান্ত্রিক হলেও যুক্তিসঙ্গত নয়। তাই লেজ কি এই পদ্ধতিকে নিকৃষ্ট পদ্ধতি বলেছেন। সুইজারল্যান্ড এর কয়েকটি ক্যান্টনে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে এই পদ্ধতিতে বিচারপতি নিয়োগ করা হয়ে থাকে।
B. আইন সবার দ্বারা:-
প্রথম পদ্ধতির তুলনায় এই পদ্ধতিতে নিয়োগ ভালো হলেও বিচারকদের শাসকদলের প্রতি অনুগত্যের সম্ভাবনা থেকে যায়। সুইজারল্যান্ড, বুলগেরিয়া, বলিভিয়া প্রভৃতি দেশে এই পদ্ধতিতে নিয়োগ করা হয়।
C. শাসন বিভাগের দ্বারা:-
এই পদ্ধতিতে উপযুক্ত গুণ ও দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ করা হয়। তাই এই পদ্ধতির সবচেয়ে উৎকৃষ্ট পদ্ধতি। ভারত ব্রিটেন, কানাডা, প্রভৃতি দেশে বিচারপতি এইভাবে নিযুক্ত বা নিয়োগ করা হয়ে থাকে।
বিচারপতির কার্যকাল:-
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণের জন্য বিচারপতিদের কার্যকাল স্থায়িত্ব ও গুরুত্বপূর্ণ কেননা তারা স্বল্পকালের জন্য নিযুক্ত হলে তাদের কাছ থেকে আর কি ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করা যায়।
বিচারকদের অপসারণ:-
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিচারকদের অপসারণ পদ্ধতির উপর বহুলাং সে নির্ভরশীল কেননা তারা যদি মনে করে যখন তখন তাদের পদচিত করা হতে পারে তবে বিচারপতিরা স্বাধীনভাবে বিচার কার্য সম্পন্ন করতে পারবে না।
বিচারকদের বেতন ও ভাতা:-
বিচারকদের বেতন ও ভাতার ওপর বিভাগের স্বাধীনতা নির্ভর করে। বিচার পতিদের বেতন ও ভাটা কম হলে অসৎ উপায়ে তারা অর্থ সংগ্রহ করবে । অথবা প্রশিক্ষিত ও যোগ্য ব্যক্তিরা কখনোই বিচারপতি হতে চাইবে না।
স্বতন্ত্রীকরণ:-
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করতে হলে আইন ও শাসন বিভাগ থেকে বিচারবিভাগকে আলাদা করা প্রয়োজন। বর্তমানে অধিকাংশ দেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য আইন ও শাসন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে।
বিচারকদের রায় ও সমালোচনার ঊর্ধ্বে:-
বিচারকদের রায়কে সমালোচনা করা যায় না। বিচারকরা যাতে নির্ভয়ে ও নির্বিধায় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে তাই এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তাই সংবিধানের ১২১ নং ধারা অনুসারে পার্লামেন্টে বিচারপতিদের কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে কোন বিরোধ বা আলোচনা করা যায় না।
মূল্যায়ন:-
উপরে উল্লেখিত সংবিধানিক ব্যবস্থাগুলির মধ্যে ত্রুটি আছে যেমন বিচারপতি নিয়োগের সময় রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করতে বাধ্য কিন্তু এই পরামর্শ রাষ্ট্রপতির ওপর বাধ্যতামূলক প্রয়োজন নয়। বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবকে প্রতিরোধ করা যায়নি। তাই এলান বল বিচার পতিদের নিরপেক্ষতাকে ” আধা পালিক কাহিনী” বলে ঘোষণা করেছেন।