এশিয়াবাসীদের জন্য এশিয়া নীতি বলতে কী বােঝ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান কেন এই নীতি গ্রহণ করে?

ভূমিকা:-

১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে জাপান অতি দ্রুত গতিতে আধুনিকরণ ও প্রাশ্চাত্য চিন্তাধারার দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি গুলি বিশেষ শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। এইসব ইউরোপীয় শক্তিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ডাচ বা ওলন্দাজ প্রভৃতি গোষ্ঠীগুলি। তবে বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে জাপান এশিয়ার উপনিবেশ গুলি থেকে এইসব পশ্চিমী শক্তিগুলিকে বিতাড়িত করে উপনিবেশিক সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটানোর যে সক্রিয় নীতি ও উদ্যোগ গ্রহণ করে তা ‘এশিয়াবাসীদের জন্য এশিয়া নীতি ‘ নামে পরিচিত।

জাপানের এশিয়া নীতি গ্রহণের কারণ:-

জাপান কর্তৃক “এশিয়াবাসীদের জন্য এশিয়া” এই স্লোগান প্রচারের কয়েকটি উদ্দেশ্য ছিল —

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

i. পশ্চিমী শক্তির অধিকার তত্ত্বের বিরোধিতা:-

এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যেসব ইউরোপীয় শক্তির স্লোগান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা “এশিয়াবাসীদের জন্য এশিয়া” এই স্লোগান প্রচারের মাধ্যমে অবসান ঘটানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় জাপানের মতে ‘একমাত্র শাসন করার অধিকার আছে’ । এই নীতির দ্বারা উজ্জীবিত জাপান যথারীতি প্রবল বিক্রমে এশিয়া থেকে পশ্চিমী উপনিবেশিক শক্তি গুলিকে বিতাড়িত করে নিজেদের অধিপত্য প্রতিষ্ঠার কাজে নেমে পড়ে।

ii. জাপানের অগ্রাচ্ছি নীতি প্রয়োগ:—

এই নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে জাপার প্রকৃতপক্ষে পূর্ব এশিয়ার জুড়ে তার সাম্রাজ্যবাদী লিপসা চরিতার্থ করে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিদেকি তোজো ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত বৃহৎ পূর্ব এশিয়ার সম্মেলন এর প্রদত্ত ব্যাক্তি তাই দাবি করেছেন যে পূর্ব এশিয়ায় “এশিয়াবাসীদের জন্য এশিয়া “নীতির মধ্যে দিয়ে এশিয়াবাসীদের আশা আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে। তবে এই সম্মেলনে জাপানের প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত বক্তব্য ছিল ” এশিয়া শুধু এশিয়াবাসীদের জন্যই” ।

iii. এশিয়ার দেশগুলিকে উৎসাহ দান:—

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান পাশ্চাত্য মিত্র শক্তির বিরুদ্ধে বিপুল সামরিক শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুধু তাই নয় নিজের সাফল্য সুনিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে জাপানে অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ এবং জাতিগুলিকেও মিত্রশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে শামিল করার প্রয়াস চালায়।

iv. সর্বময় কর্তৃত্ব স্থাপন:—

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিকে ইংল্যান্ড ও আমেরিকার কর্তৃত্ব মুক্ত করে সেখানে জাপান নিজের সর্বময় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে এই নীতি ঘোষণা করে। জাপানের লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা যেখানে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সংস্কৃতিক প্রভৃতিক সর্বক্ষেত্রে জাপান নেতৃত্ব গ্রহণ করবে।

v. প্রকৃত সম্মেলনের অধিকার:—

পশ্চিমে দেশগুলি পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে নির্বিচারের প্রাকৃতিক সম্পদ সংগ্রহ করে তার নিজেদের দেশে নিয়ে যায়। এই সব সম্পদ ও কাঁচামালের ওপর ভিত্তি করে সেখানে শিল্পের বিকাশ ঘটে পশ্চিমীদের এই অবৈধ অধিকার বিরোধিতা করে জাপান ঘোষণা করে ” এশিয়াবাসীদের জন্য এশিয়া“।

vi. মূল ভূখণ্ডের অধিপত্যের আকাঙ্ক্ষা:—

জাপানের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বাসস্থানের ব্যবস্থার জন্য নতুন নতুন ভূখণ্ড প্রয়োজন হয়। অথচ ইতিমধ্যে এশিয়ার মোট ভূখণ্ডে বিভিন্ন স্থানে পশ্চিমে শক্তিগুলির অধিপত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। জাপান তাই ” এশিয়াবাসীদের জন্য এশিয়া ” স্লোগানের মাধ্যমেই এই অঞ্চলগুলি থেকে পশ্চিমে শক্তি গুলিকে সরিয়ে নিজেদের অধিপত্য প্রতিষ্ঠা তৎপর হয়।

উপসংহার:—

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এক কথায় বলা যায় যে জাপানের মূল উদ্দেশ্য ছিল সমগ্র এশিয়া জুড়ে নিজ অধিপত্যকে সমৃদ্ধ ও সুনিশ্চিত করা। পশ্চিমী শক্তির বিরুদ্ধে জাপান যেসব নীতি গ্রহণ করেছিল তা জাপানের সাম্রাজ্য বাদী নীতির প্রতিফলন ছিল মাত্র। জাপানের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিশ্ব রাজনীতিতে নিজেকে শক্তিশালী সাম্রাজ্য রূপে গড়ে তোলা।

5/5 - (2 votes)

Leave a Comment