ভূমিকা:-
শিক্ষা বিজ্ঞানের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শিখন। আর এই শিখন এর সংজ্ঞা বিভিন্ন মনোবিজ্ঞানী গণ বিভিন্নভাবে দিয়েছেন তার মধ্যে থেকে অত্যন্ত দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা হলো—
ক. অতীত, অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ ,সক্রিয়তা এবং অনুশীলনের প্রভাবকে ব্যক্তি জীবনের আচরণ ধারার পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকে বলা হয় শিখন।
খ. যে মানবিক প্রক্রিয়া অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আচরণের প্রগতিশীল পরিবর্তনে ব্যক্তির মানসিক ও ব্যক্তির শারীরিক বিকাশ ঘটিয়ে তাকে পরিবর্তনশীল পরিবেশে সঙ্গে সার্থকভাবে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে তাকে শিখন বলে।
বিভিন্ন মনস্তবিদ শিখনের বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন, যেমন —
ম্যাকগিয়াক এবং ইরোহন বলেন :-
সক্রিয়তা, অনুশীলন এবং অভিজ্ঞতার ফলে আচরণের পরিবর্তনকেই শিখন বলে।
এইচ পি স্মিথ বলেন :—
শিখন হলো নতুন আচরণের আয়ত্তিকরণ অথবা অভিজ্ঞতার ফলে পুরনো আচরণের দৃধি করণ অথবা শিথিল করন।
ভাইগটস্কি বলেন :—
শিখন জ্ঞান নির্মাণের সামাজিক প্রক্রিয়া।
শিখনের বৈশিষ্ট্য:—
শিখন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভের জন্য এর বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করা প্রয়োজন—
i. উদ্দেশ্যমুখী:—
প্রথাগত শিক্ষায় শিখন উদ্দেশ্য আয় করার জন্যই শিক্ষার্থীরা শেখে।
ii. বিকাশ মান:—
শিখন হলো একটি ক্রমবিকাশমান প্রক্রিয়া। জন্ম কাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের জীবনে শিখনের প্রক্রিয়া চলতে থাকে।
iii.চাহিদা নির্ভর:—
শিখন প্রক্রিয়া চাহিদা নির্ভর অর্থাৎ চাহিদা পূরণ শিখনকে নিয়ন্ত্রণ করে।
iv.ব্যক্তি ও সমাজ নির্ভর:-
শিখন যেমন ব্যক্তির চাহিদার ওপর নির্ভর করে তেমনি সমাজের চাহিদার দ্বারা শিখন প্রভাবিত সমাজ তার আশা আকাঙ্ক্ষা, সমাজবদ্ধ জীব। সমাজের মধ্যেই সে বড় হয়ে ওঠে। প্রতিদিন সমাজের বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে সে মিথস্ক্রিয়া করে। যার ফলে সে অনেক কিছুই শেখে। তাই শিখন হল ব্যক্তি ও সমাজ নির্ভর প্রক্রিয়া।
v.আচরণগত পরিবর্তন:—
ব্যক্তি যখন কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়, তখন সে পূর্বা জীবিত আচরণের দ্বারা তা সমাধানের চেষ্টা করে। এইভাবে তার আচরণের পরিবর্তন ঘটে। তাই শিখন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি তার আচরণের পরিবর্তন হয়।
vi.অভিজ্ঞতামূলক:—
শিখন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাণীরা নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে শেখে। এবং নতুন কোন সমস্যায় পরলে সমাধানের পথ খুঁজে বার করে।
vii.সক্রিয় প্রক্রিয়া :—
ব্যক্তি নিজে সক্রিয় না হলে শিখন সম্ভব নয়। শিখনের জন্য চাই প্রচেষ্টা। প্রচেষ্টার অভাব দেখা দিলে যথাযথ শিখন হয় না।
viii.পরিবেশের ফল:—
মানুষের যাবতীয় অভিজ্ঞতা অর্জিত হয় পরিবেশ থেকে। সেই কারণে শিখনকে ত্বরান্বিত করে।
ix.কুসংস্কার দূরীকরণ:—
শিখন ব্যক্তিকে যুক্তি নির্ভর করে তোলে কুসংস্কার অনুবিশ্বাস ইত্যাদি থেকে ব্যক্তিকে যুক্ত করতে সাহায্য করে।
মূল্যায়ন:-
পরিশেষে বলা যায় যে শিখন হলো উদ্দেশ্যমূলক। শিখন মানুষের প্রয়োজনে ও বিভিন্ন দিক থেকে সাহায্য করে এবং দেহ ও মনের পরিবর্তনের কাজেই শিখন। এটি হলো এক ধরনের এমন এক প্রক্রিয়া যা ব্যক্তির অভিজ্ঞতা আচরণ ও ধারার পরিবর্তন ঘটাতে সাহায্য করে।
শিক্ষাবিজ্ঞানের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নাবলী👇
শিখন ও পরিণমনের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো?
পরিনমন কাকে বলে? পরিনমনের বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ ?