জোট নিরপেক্ষ বলতে কী বোঝো? ভারতে জোট নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণের কারণ ও উদ্দেশ্যগুলি আলোচনা করো।

জোট নিরপেক্ষ বলতে কী বোঝো? ভারতে জোট নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণের কারণ ও উদ্দেশ্যগুলি আলোচনা করো।

Ans:—

 জোট নিরপেক্ষ নীতি:—

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গোটা বিশ্ব পরস্পর বিরোধী জোটে বিভক্ত হয়ে যাওয়ায় ঠান্ডা লড়াইয়ের সূচনা হয়। স্বাধীনতার পর ভারত বর্ষ এই দুই বিবাদমান জোটের কোনটিতে যোগ না দিয়ে সব দেশের সঙ্গেই বন্ধুত্ব বা সম দূরত্ব বজায় রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভাবে বৈদেশিক সম্পর্ক পরিচালনা জন্য নিরপেক্ষ নীতি বলে। জোট নিরপেক্ষ নীতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে J. Bartan বলেছেন জোট নিরপেক্ষতা বল তুই বোঝায় সমাজতান্ত্রিক জোট ও ইঙ্গ মার্কিন পুঁজিবাদী গোষ্ঠীর প্রভাব থেকে দূরে সরে থেকে বিদেশ নীতির নির্ধারণ ও পরিচালনা করা। পশ্চিমী পণ্ডিতেরা দুইশক্তি জোট থেকে বন্ধুত্ব বা সম দূরত্বের নীতি গ্রহণের নীতি কে নির্জট ব্যবস্থা বলে থাকেন। আবার অনেকেই বলেছেন জোট নিরপেক্ষ বা নির্জট আন্দোলন ছিল ঠান্ডা লড়াই এর বিরুদ্ধে তৃতীয় বিশ্বের সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিবাদ।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

ভারতবর্ষে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের রূপকার ও প্রথম প্রবক্তা জহরলাল নেহেরু মনে করেন সামরিক জোটের প্রতিষ্ঠা করতে বিশ্ব শান্তি আনা যায় না বরং সামরিক জোট যুদ্ধ সৃষ্টি করে। স্বাধীন ও পক্ষপাতি নীতি গ্রহণ করে পৃথিবীতে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই ছিল নেহেরুর প্রধান লক্ষ্য।

জোট নিরপেক্ষ নীতির গঠনের কারণ বা উদ্দেশ্য:—

 ১. ভৌগোলিক অবস্থান:—

ভারতের ভৌগোলিক অবস্থান ভারতের পররাষ্ট্র নীতি গঠনের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সাহায্য করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার কেন্দ্রস্থলে ভারত অবস্থিত হওয়ার ফলে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সচ্ছল তাই জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে ভারতের নেতৃত্বদানের বিষয়টি ছিল স্বাভাবিক।

 ২. আদর্শগত উপাদান:—

গৌতম বুদ্ধের অহিংস নীতির অনুরাগী ছিলেন মৌর্য সম্রাট অশোক। তিনি অহিংসার আদর্শে তার সাম্রাজ্য শাসন করতেন। অনুরূপভাবে শান্তিবাদী আদর্শের দাঁড়ায় ভারতে পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হয়। তাই তৎকালীন ভারতীয় নেতৃবৃন্দ বিশ্বাস করতেন যে শান্তিপূর্ণ উপায় আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব।

 ৩. জাতীয় সংরক্ষণ:—

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতের সামনে প্রধান সমস্যা ছিল অনুন্নয়ন বা অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা। তাই অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে ভারতের নেতৃবৃন্দ ধনতান্ত্রিক জোট বা সমাজতান্ত্রিক জোট কোনটিতে যোগ না দিয়ে মিশ্র অর্থনৈতিক গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়।

  ৪. রাজনৈতিক কারণ:— 

স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু রাজনৈতিক দিক থেকে পুঁজিবাদ বা সাম্রাজ্যবাদ কোনটিতে সমর্থন করেননি তিনি ঠান্ডা লড়াই এর যুগে এই আদর্শকে সমর্থন না করে দুটি থেকে সম দূরত্ব বজায় রাখেন ” বিশ্বের পক্ষে ও আমাদের পক্ষে যা ক্ষতিকর তা আমরা নিরদ্রিধায় নিন্দা করব”।

  ৫. শান্তিপূর্ণ  সহাবস্থান:—

সদ্য স্বাধীনতার প্রাপ্ত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির মনে হয়েছিল বিবাদমান জোটে যোগদান করলে তারা আরো বিবাদে জড়িয়ে পড়বে ফলে বিশ্ব শান্তি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হবে। তাই তারা জোট নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণের মাধ্যমে স্থিতিশীল অবস্থা বাজায় রাখতে চেয়েছিল।

উপসংহার:—

ত্রুটি বিচ্যুতি সাফল্য ব্যর্থতার বিভিন্ন নিদর্শন নিয়ে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন বিশ্ব রাজনীতিকে আলোড়িত করে তোলে। তবে উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও বর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে যে আদর্শ নিয়ে এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল তা এক মেরু বিশ্ব ও নেতৃত্ব দানের জন্য দিশেহারা হয়ে পড়ে।

2.6/5 - (8 votes)

Leave a Comment