অথবা
জাতীয় শক্তি কাকে বলে? জাতীয় শক্তির মুখ্য উপাদান গুলি ব্যাখ্যা কর।
অথবা
জাতীয় শক্তির উপাদান বিশ্লেষন করো।
উত্তর:-
শক্তির সংজ্ঞা ও প্রকৃতি:-
শক্তির সংজ্ঞা নির্ধারণ করা যথেষ্ট কঠিন।শক্তি শব্দটিকে বিভিন্ন অর্থে প্রয়োগ করা হয়। পদার্থবিদ্যার ক্ষেত্রে শক্তি বলতে যা বোঝানো হয় তা আবার মানবিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অর্থে প্রযুক্ত করা হয়।আবার আন্তর্জাতিক সম্পর্কে শক্তি শব্দটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়।
শব্দগত অর্থ:-
শক্তির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Power যার ফরাসি শব্দ Pouvoir এবং ল্যাটিন শব্দ Protestas থেকে এসেছে যার অর্থ হলো সর্ব ক্ষমতা।
শক্তির সংজ্ঞা:-
এক কথায় শক্তির সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব। বিশ্বের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভূমিকা পালন করে একটি ছোট রাষ্ট্র সে একই ভূমিকা পালন করতে পারে না।ভূমিকার মূল উৎসই হল শক্তি অর্থাৎ ক্ষমতার কোনো সর্বজন গ্রাহ্য সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব না হলেও এর সম্বন্ধে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন।যেমন– অধ্যাপক মার্গেন্ট থাওয়ের মতে “কোন ব্যক্তির মন ও ক্রিয়া-কলাপ এর ওপর অন্য ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণেই হলো ক্ষমতা ” অরগানস্কির মতে “ক্ষমতা বলতে নিজের লক্ষ্য অনুযায়ী অন্যের আচার-আচরণের প্রভাবিত করায় হলো ক্ষমতা” জোসেপ ফ্রাঙ্কেলের মতে ” অন্যের মনের কাজকর্মকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং কাঙ্খিত ফল সৃষ্টির সমর্থকেই হলো শক্তি।এক কথায় শক্তি বলতে অন্যকে এমন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার সমর্থকে বোঝায়, যাতে নিয়ন্ত্রণকারী ইচ্ছামত কাজ করাতে বাধ্য করে।
আরও পড়ুন:- আধুনিক রাষ্ট্রের আইন প্রণয়নের কার্যাবলী আলোচনা কর।
ক্ষমতা বা জাতীয় শক্তির উপাদান:-
ক্ষমতা বা জাতীয় শক্তির মূল উপাদানগুলি হল—
১. ভৌগোলিক উপাদান :-
কোন একটি দেশের ভৌগোলিক উপাদান ও তার জাতীয় শক্তির অন্যতম নির্ধারক। ভৌগোলিক উপাদানের গুরুত্ব কে চারিদিক থেকে আলোচনা করা যেতে পারে। যথা– আয়তন, অবস্থান ,ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ু।
ক. অবস্থান:-
কোন একটি দেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও দেশের সামরিক নিরাপত্তা জনিত ব্যবস্থা কে প্রভাবিত করতে সক্ষম। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান।
খ. আয়তন:-
ভূভাগের বিশাল আয়তন সামরিক দিক থেকে সুবিধা জনক অবস্থার সৃষ্টি করে।
গ. ভূপ্রকৃতি:-
আধুনিক বিশ্বের এক জাতি শক্তির ভূপ্রকৃতির অবদান রয়েছে। যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভূ প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল।
ঘ. জলবায়ু:-
জলবায়ু মানুষের কর্মদক্ষতাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং জাতীয় শক্তি নির্ধারণ করে। যেমন- নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল কোন বৃহৎ শক্তির আত্মপ্রকাশের সহায়ক।
২. অর্থনীতি:-
অর্থনীতি সামর্থ্য ছাড়া কোনো দেশের পক্ষে জাতীয় শক্তিতে সমৃদ্ধ হওয়া সম্ভব নয়। মানব সম্পদ ও প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন প্রযুক্তিবিদ্যার আর যার জন্য দরকার অর্থনীতি সামর্থ। যেমন জাপান এর মাধ্যমে শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
৩. জনসংখ্যা:-
জাতীয় শক্তির অন্যতম উৎস হল জনসংখ্যা। যদি কোন দেশের জনসংখ্যা শিক্ষিত ও উৎপাদনশীল হয় এবং সেই দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের সঙ্গে সামঞ্জস্য পূর্ণ হয় তবে জাতীয় সম্পদ উৎপাদনের সুবিধা হয়। এছাড়া একটি দেশের শক্তিশালী সাময়িক বাহিনীর গড়ে তোলার জন্য জনসংখ্যার প্রয়োজন।
আরও পড়ুন:-ক্রেতা আদালতের গঠন, উদ্দেশ্য, বৈশিষ্ট্য, ক্ষমতা ও কার্যাবলি।
৪. মনস্তত্ত্ব:-
জাতি শক্তির অন্যতম উপাদান হলো মনস্তত। একটি জাতির যখন আত্মবিশ্বাস থাকবে তখন সেই জাতি নিজের উন্নতিতে সার্বিক সচেষ্ট হবে তখন তাদের সামগ্রিক উন্নতি ঘটবে। যেমন– হিটলার জার্মান জাতির মধ্যে আর্য জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার করেছিলেন।
৫. সাময়িক শক্তি:-
কোন একটি দেশে জাতীয় শক্তি তার সামরিক শক্তির ওপর নির্ভরশীল। সামরিক শক্তি বলতে বোঝায় দেশের সেনাবাহিনীকে , আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র পরমাণবিক বোমা অন্যান্য শক্তিশালী মরনাস্ত্র প্রভৃতি শক্তিকে বোঝায়। যেমন আমেরিকা, রাশিয়া , সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী হওয়ায় পৃথিবীর সব থেকে শক্তিশালী রাষ্ট্র ।
৬. কূটনীতি:-
কোন দেশের জাতীয় শক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল কূটনীতি। তাই মারগেন থাও “কূটনীতিকে জাতীয় শক্তির মস্তিষ্ক” বলে বর্ণনা করেছেন। একটি দেশের পররাষ্ট্র নীতি বা বাস্তবায়নের দায়িত্ব নির্ভর করে কূটনীতি বৃদ্ধের উপর।
৭. সরকার:-
জাতীয় ক্ষমতার ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণ ও নির্ধারিত নীতির পক্ষে জনসমর্থন সংগ্রহ করা সরকারের দায়িত্ব।
উপসংহার:-
পরিশেষে বলা যায় যে ক্ষমতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে উপরিউক্ত উপাদান গুলি যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। তবে প্রতিটি উপাদান যথাযথ ভাবে ভূমিকা পালন করলে একটি দেশ বিশ্ব রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেন।
So nice to answer thank you