ক্রেতা আদালতের গঠন, উদ্দেশ্য, বৈশিষ্ট্য, ক্ষমতা ও কার্যাবলি।

 অথবা

ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের উপর একটি টীকা লেখ।

Ans:-

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

ক্রেতা আদালত:-

             ক্রেতা আদালত হল এক বিশেষ ধরনের আদালত সাধারণভাবে বলা যায় যে কোন হাট, বাজার, দোকান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বা ব্যক্তির কাছ থেকে মূল্য দিয়ে কোন পরিষেবা বা জিনিস ক্রয় করে থাকে তাদের ক্রেতা বলা হয়। আর এই ক্রেতা যখন কোন জিনিস বা পরিষেবা কিনতে গিয়ে বঞ্চিত বা প্রসারিত হয় তখন তারা যে আইনগত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিকার বা  ন্যায় পেতে পারেন তাকে বলা হয় ক্রেতা আদালত বা “Consumer Court” ।

ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের গঠন:-

             ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে ক্রেতা বা উপভোক্তাদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখার জন্য ক্রেতা সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হয়। সেই অনুযায়ী ক্রেতা আদালত গঠিত হয় m ক্রেতাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য তিনটি স্তরে তিন ধরনের ক্রেতা আদালত গঠন করা হয়েছে, যেমন—

       A. জেলা ক্রেতা আদালত:-

             রাজ্য সরকার জেলা স্তরের ক্রেতাদের সুরক্ষার স্বার্থে যে সংস্থা গঠন করে তাকে জেলা ক্রেতা আদালত বলে। জেলা ক্রেতা আদালত তিনজন সদস্যকে নিয়ে গঠিত যার মধ্যে একজন অবসরপ্রাপ্ত অথবা কর্মরত জেলা জজ যিনি সভাপতি হিসেবে কাজ করবেন এবং বাকি দুইজন হল কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়স্ক স্নাতক ডিগ্রির মহিলা ও পুরুষ হতে হবে। এই আদালতে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিবাদের মীমাংসা হয়।

       B. রাজ্য ক্রেতা আদালত:-

           এটি হলো রাজ্যস্তরে ক্রেতাদের অভিযোগে মীমাংসার জন্য আদালত। এই আদালত তিনজন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে যার মধ্যে একজন হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বা কর্মরত বিচারপতি যিনি সভাপতি হিসেবে কাজ করেন এবং বাকি দুজনের মধ্যে কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়স্ক একজন পুরুষ ও একজন মহিলা হতে হবে এই আদালত ২০ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত বিবাদের মীমাংসা হয়।

       C. জাতীয় ক্রেতা আদালত:-

           এটি ক্রেতাদের জন্য দেশের সর্বোচ্চ আদালত হলো জাতীয় ক্রেতা আদালত বা জাতীয় কমিশন। জাতীয় ক্রেতা আদালত পাঁচ জন সদস্য নিয়ে গঠিত যার মধ্যে একজন সুপ্রিম কোর্টের কর্মরত বিচারপতি যিনি এই আদালতের সভাপতি হিসেবে কাজ করবেন। এবং বাকি চারজনের মধ্যে কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়স্ক স্নাতক ডিগ্রিধারী একজন মহিলা বাকি তিনজন পুরুষ হতে হবে। এই আদালতে ১ কোটি টাকার ওপরে বিবাদের মীমাংসা হয়।


ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের উদ্দেশ্য:-

      ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের প্রধান উদ্দেশ্য গুলি হল—

        i. ক্রেতার অধিকার রক্ষা, উৎসাহিত এবং উন্নত করা।

        ii. যেকোনো দ্রব্য বা পরিসেবা, মূল্য, পরিমাণ, গুণগত মান ইত্যাদি জানার ব্যাপারে ক্রেতার অধিকার কে মান্যতা দেওয়া।

       iii. অন্যায় ও অনুচিত ব্যবসা করে যদি কোন ক্রেতাকে ঠকায় বা ব্যাপক হারে শোষণ করে তাহলে ক্রেতার অধিকার রয়েছে যে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা।

ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বৈশিষ্ট্য:-

    ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে—

      i. শুধু ক্রেতাদের স্বার্থ রক্ষা করা:-

             এই আদালতের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল ক্রেতা ছাড়া অন্য কেউ এখানে অভিযোগ দায়ের করতে পারবে না।

     ii. আইনজীবীর প্রয়োজন নেই:-

             ক্রেতা আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করার জন্য কোন আইনজীবীর প্রয়োজন নেই। ক্রেতা নিজেই তার মামলা পরিচালনা করতে পারেন।

     iii. পরিষেবা ও অন্তর্ভুক্ত:-

             এই আদালতে শুধুমাত্র ক্রয় করা জিনিস বা দ্রব্য নয় ক্রেতা তার অর্থের বিনিময়ে কোন পরিষেবা ক্রয় করে তার বিরুদ্ধে মীমাংসা ও এই আদালতে করা হয়।

    iv. অভিযোগকারী নালিশ:-

             এই আদালতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এখানে শুধুমাত্র ক্রেতার অভিযোগের ভিত্তিতে নালিশ গ্রহণ করা হয়।

ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের ক্ষমতা ও কার্যাবলী:-

       ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের ক্ষমতা ও কার্যাবলী হল নিম্নরূপ—

         i. উপভোক্তাদের স্বার্থ সুরক্ষিত করা:-

               ক্রেতা আদালতের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হল উপভোক্তাদের স্বার্থ সুরক্ষিত করা। প্রতারিত বা বঞ্চিত ক্রেতারা কিভাবে ক্ষতিপূরণ পাবে তা নিশ্চিত করা এই আদালতের প্রধান কাজ।

         ii. একতিয়ার বিচারের ক্ষমতা :-

               কোন অভিযোগ বা নালিশ বিচার করার আগে ক্রেতা আদালত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করে। নিশ্চিত হয় সেই অভিযোগের সমাধান সূত্র তার একতিয়ারের অন্তর্ভুক্ত কি না।

        iii. আদেশ বলবধ করার ক্ষমতা:-

               ক্রেতা আদালতের আদেশ বলবোধ করার ক্ষমতা রয়েছে। ক্রেতা আদালতের দেওয়া নির্দেশ অমান্য করলে নির্দেশ অমান্যকারী ব্যাক্তির জেল ও জরিমানা দুই হতে পারে।

মূল্যায়ন:-

          পরিশেষে বলা যায় ক্রেতা সুরক্ষা আদালত শুধুমাত্র তখনই ক্রেতার পক্ষে রায় দান করে যদি প্রমাণিত হয়। বিক্রেতা অলৌকিক আচরণের জন্য ক্রেতাকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং ক্রেতাকে হয়রানির সম্মুখীন হয়েছে। ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা ডায়ের করার জন্য উপযুক্ত প্রমাণ পত্র যদি ক্রেতার হেফাজতে না থাকে তবে ক্রেতা আদালতে মামলা দায়ের করে জেতা খুবই কষ্টকর।

3.4/5 - (5 votes)

Leave a Comment